Wednesday, November 30, 2011

বোধ / জীবনানন্দ দাশ

বোধ কবিতাটির ইউটিউব চিত্র দেখতে এখানে ক্লিক করুন
বোধ কবিতাটির আবৃত্তি শুনতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন 
আলো — অন্ধকারে যাই — মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে!
স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!
আমি তারে পারি না এড়াতে
সে আমার হাত রাখে হাতে;
সব কাছ তুচ্ছ হয়, পন্ড মনে হয়,
সব চিন্তা — প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়!

Monday, November 28, 2011

আলালের ঘরের দুলাল / সুভাষ মুখোপাধ্যায়

বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে
পায়ে শিকল দিয়ে কোকিল
মরছে কেশে কেশে
এ গাঁয়েতে বান তো
ও গাঁয়েতে খরা
যে করে হোক আখেরে ভোট
ভাতের টোপে ধরা
নীচেয় থাকে হাবা বোবা
ওপরতলায় কালা
কাজের জন্যে মানুষ হন্যে
দরজাগুলোয় তালা
এই এটাকে চেয়ারে বসা
ওই ওটাকে হটা
সামনে পুলুশ পিছনে জুলুশ
তবে না ঘটাপটা
খুনখারাবি রং বুলিয়ে
মন ভুলিয়ে ঝান্ডায়
চাইবে গদি না দাও যদি
ঠান্ডা করবে ডান্ডায়
বাড়ির পর বাড়ি রে ভাই
গাড়ির পর গাড়ি
আপনজনে পরের ধনে
চালাচ্ছে পোদ্দারি
পার্ক ময়দানে জলা জমি
হাত করছে টাকার কুমির
ছিল নাকে কপর্দকও, তোমন লোকও
লাল হয়ে আজ হচ্ছে আমির
বাইরে চটক ভেতরে ফাঁপা
কতদিন আর থাকবে চাপা
হাটে ভাঙছে হাঁড়ি এখন পর পর
একটু যদি দাঁড়ান ঘুরে
দেখতে পাবেন রাজ্য জুড়ে
বেঁধে যায় কি চব্বর
ছাড়ায় সীমা সহ্যের
এতদিন যা হয়ে এসেছে
এসব আজ তার জের ।

Sunday, November 27, 2011

নেড়া বেল তলায় যায় কবার ?

রোদে রাঙা ইঁটের পাঁজা তার উপরে বসল রাজা—
ঠোঙাভরা বাদামভাজা খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না৷
গায়ে আঁটা গরম জামা পুড়ে পিঠ হচ্ছে ঝামা;
রাজা বলে, "বৃষ্টি নামা— নইলে কিচ্ছু মিলছে না৷"
থাকে সারা দুপুর ধ'রে ব'সে ব'সে চুপটি ক'রে,
হাঁড়িপানা মুখটি ক'রে আঁকড়ে ধ'রে শ্লেটটুকু;
ঘেমে ঘেমে উঠছে ভিজে ভ্যাবাচ্যাকা একলা নিজে,
হিজিবিজি লিখছে কি যে বুঝছে না কেউ একটুকু৷
ঝাঁ ঝাঁ রোদ আকাশ জুড়ে, মাথাটার ঝাঁঝ্‌রা ফুঁড়ে,
মগজেতে নাচছে ঘুরে রক্তগুলো ঝনর্‌ ঝন্‌;
ঠাঠা–পড়া দুপুর দিনে, রাজা বলে, "আর বাঁচিনে,
ছুটে আন্‌ বরফ কিনে ক'চ্ছে কেমন গা ছন্‌ছন্‌৷"
সবে বলে, "হায় কি হল! রাজা বুঝি ভেবেই মোলো!
ওগো রাজা মুখটি খোল–কওনা ইহার কারণ কি?
রাঙামুখ পান্‌সে যেন তেলে ভাজা আম্‌সি হেন,
রাজা এত ঘামছে কেন–শুনতে মোদের বারণ কি?"
রাজা বলে, "কেইবা শোনে যে কথাটা ঘুরছে মনে,
মগজের নানান্‌ কোণে– আনছি টেনে বাইরে তায়,
সে কথাটা বলছি শোন, যতই ভাব যতই গোণ,
নাহি তার জবাব কোনো কূলকিনারা নাইরে হায়!
লেখা আছে পুঁথির পাতে, 'নেড়া যায় বেলতলাতে,'
নাহি কোনো সন্দ তাতে–কিন্তু প্রশ্ন 'কবার যায়?'
এ কথাটা এদ্দিনেও পারোনিকো বুঝতে কেও,
লেখেনিকো পুস্তকেও, দিচ্ছে না কেউ জবাব তায়৷
লাখোবার যায় যদি সে যাওয়া তার ঠেকায় কিসে?
ভেবে তাই না পাই দিশে নাই কি কিচ্ছু উপায় তার?"
এ কথাটা যেমনি বলা রোগা এক ভিস্তিওলা
ঢিপ্‌ ক'রে বাড়িয়ে গলা প্রণাম করল দুপায় তার৷
হেসে বলে, "আজ্ঞে সে কি? এতে আর গোল হবে কি?
নেড়াকে তো নিত্যি দেখি আপন চোখে পরিষ্কার—
আমাদেরি বেলতলা সে নেড়া সেথা খেলতে আসে
হরে দরে হয়তো মাসে নিদেন পক্ষে পঁচিশ বার৷"