Wednesday, January 12, 2011

সাবধান / সুকুমার রায়

রোদে রাঙা ইঁটের পাঁজা, তার উপরে বসল রাজা-

ঠোঙাভরা বাদাম ভাজা খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না।

গায়ে আঁটা গরম জামা, পুড়ে পিঠ হচ্ছে ঝামা;

রাজা বলে, “বৃষ্টি নামা- নইলে কিচ্ছু মিলছে না”।

থাকে সারা দুপুর ধ’রে, ব’সে ব’সে চুপটি করে,

হাঁড়িপানা মুখটি ক’রে আঁকড়ে ধরে শ্লেটটুকু;

ঘেমে ঘেমে উঠছে ভিজে, ভ্যাবাচ্যাকা একলা নিজে,

হিজিবিজি লিখ্ছে কি যে বুঝ্ছে না কেউ একটুকু।

ঝাঁঝা রোদ আকাশ জুড়ে, মাথাটার ঝাঝড়া ফুঁড়ে,

মগজেতে নাচছে ঘুরে রক্তগুলো ঝ্ন ঝন:

ঠাঠা-পড়া দুপুর দিনে, রাজা বলে “আর বাঁচিনে,

ছুটে আন বরফ কিনে- ক’চ্ছে কেমন গা ছনছন।”

সবে বলে, “হায় কি হল! রাজা বুঝি ভেবেই মোলো।

ওগো রাজা মুখটি খোল- কওনা ইহার কারণ কি?

রাঙামুখ পানসে যেন, তেলে ভাজা আমসি হেন,

রাজা এত ঘামছে কেন- শুনতে মোদের বারণ কি”?

রাজা বলে, “কেইবা শোনে যে কথাটা ঘুরছে মনে,

মগজের নানান কোণে- আনছি টেনে বাইরে তায়;

সে কথাটি বলছি শোন, যতই ভাব যতই গোন,

নাহি তার জবাব কোন কুলকিনারা নাইরে হায়।

লেখা আছে পুথিঁর পাতে, ‘নেড়া যায় বেলতলাতে’,

নাহি কোনো সন্ধ তাতে – কিন্তু প্রশ্ন ক’বার যায়?

এ কথাটা এদ্দিনেও পারেনিকো বুঝতে কেও,

লেখেনিকো পুস্তকেও, দিচ্ছে না কেউ জবাব তায়।

লাখোবার যায় যদি সে, যাওয়া তার ঠেকায় কিসে?

ভেবে তাই পাইনে দিশে নাই কি কিচ্ছু উপায় তার?”

এ কথাটা যেমনি বলা, রোগা এক ভিস্তিওলা

টিপ্ ক’রে বাড়িয়ে গলা প্রণাম করল দু’পায় তাঁর।

হেসে বলে, “আজ্ঞে সে কি?, এতে আর গোল হবে কি?

নেড়াকে তো নিত্যি দেখি আপন চোখে পরিষ্কার-

আমাদেরি বেলতলা যে, নেড়া সেথা খেলতে আসে

হরে দরে হয়তো মাসে নিদেন পক্ষে পঁচিশ বার”।

No comments:

Post a Comment